স্বামী স্ত্রীর অভিমান দ্বিতীয় পর্ব ইসলামিক গল্প

স্বামী স্ত্রীর অভিমান দ্বিতীয় পর্ব..... 

 

আম্মুঃ-“ছোট বেলা থেকেই তুই আমাকে জ্বালিয়ে ছাই কয়লা এই সব করেছিস, 

               এখন আবার ঐ সরল ছেলেটার পেছনে লেগেছিস; এই তুই বড় হবি না কখনো?” 
 

আমিঃ-“কি আমি খারাপ আর ঐ হনুমানটা সরল? 
               সে যদি সরল হয় তাহলে গোটা পৃথিবীতে জটিল কে😟?”

 

আম্মুঃ-“ছেলেটা তোর জন্য না খেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছে আর ঐ শরীরেই অফিসেও গেছে তো কি                                  বলবো আমি?” 

 

আমিঃ-“এতক্ষণ পরে এসব বলছো? এই তুমি আসলেই আমার মা তো😐?” 

 

আম্মুঃ-“আবার বাজে কথা বলছিস?” আমিও রাগ দেখিয়ে আমার রুমে চলে এসে আমার লাগেজ                         গোছানো শুরু করলাম। তারপর আমাকে বেরিয়ে যেতে দেখে আম্মু বললো-“কোথায়                               যাচ্ছিস?”  


আমিঃ-“স্বামীর বাড়ি যাচ্ছি” আম্মুঃ-“তোর গলায় না আমি হনুমান ঝুলিয়েছি? তাই যেতে হবে না”  


আমিঃ-“আমার কাজ আছে যেতেই হবে” 


 আম্মুঃ-“কি কাজ আছে?” 


 আমিঃ-“ইয়ে মানে….!!ফুলের টবে পানি দিতে হবে” 


 আম্মুঃ-“এই কাজ করতে চলে যাচ্ছিস?” 

 

আমিঃ-“হ্যা আমি এখানে থাকি আর তুমি আমার স্বামীকে বিয়ে দাও। আর আমি যেয়ে দাওয়াত খাই” 
                আমার কথা শুনে আম্মু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে😂 
               আমি বাসায় পৌছে দেখলাম ওর কাপড় গুলো পানিতেই ডুবে আছে, সাথে আমার গুলোও                        চুবে আছে😓 
                হনুমানটা এই ভাবে শোধ নিছে দেখে খুব রাগ হচ্ছে। আমি সব কাপড় গুলো শুকিয়ে আয়রন                  করলাম,রান্না করলাম। ঘরটাকে এক রাতেই ম্যাস বাড়ি বানিয়ে রেখে গেছে, সব কিছু                                গোছগাছ করলাম। রাত আটটা বাজে তবুও রোদ্দুরের বাসায় ফেরার খবর নেই😞
 
                আমি বাপের বাড়ি গেছি দেখে এই সুযোগে আবার কোনো বান্ধবীর বাসায় যায়নী তো? না না                      রোদ্দুর এমনটা করবে না, মুখে যা-ই বলুক না কেনো সে আমাকেই ভালোবাসে। কিন্তু পুরুষ                    মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই। রুমে লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে থেকে এই সব হাবি জাবি                     ভাবছিলাম। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম হনুমানটা এসেছে। আমিও ঘুমের ভান                   করে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকলাম। রোদ্দুর রুমে এসে লাইট অন করে চিৎকার করে উঠলো।                    আমিও অপ্রস্তুত ভাবে লাফ দিয়ে বসে ওর সাথে চিৎকার করতে শুরু করলাম। ভাবলাম রুমে                  হয়ত সাপ পোকা মাকড় কিছু একটা দেখে সে চিৎকার করছে😂 
                রোদ্দুর চিৎকার থামিয়ে বললো-“এই আপনি কে😳?”  
               😱আমি ওর কথায় অবাক হয়ে গেলাম। রোদ্দুর আমাকে চিনতেই পারছেনা! এক দিনের                          মধ্যে কি এমন ঘটলো যে, সে আমাকে চিনতে পারবে না? 
                মাইগ্রেইনে কি তবে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি? 


 আমিঃ-“রোদ্দুর তুমি আমাকে চিনতে পারছো না😫? আমি তোমার অবনি” সে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে                              তাকিয়ে বললো-“আপনি দেখতে ঠিক আমার বউয়ের মত” 


 আমিঃ-“😳মানে কি?” রোদ্দুরঃ-“আমার বউ তো বাপের বাড়িতে তাহলে আপনি কে?” 


 আমিঃ-“আমি চলে এসেছি রোদ্দুর” রোদ্দুরঃ-“আমার বউ তো চিরদিনের জন্য বাপের বাড়ি চলে                            গেছে। বিশ্বাস না হলে এই চিঠিটা পড়ে দেখুন” 

 

আমিঃ-“রোদ্দুর আমি ফিরে এসেছি, আমি অবনি” রোদ্দুরঃ-“বুঝেছি আপনি ভুত প্রেত ডাইনী টাইপের                   কিছু হবেন👹” 


 আমিঃ-“আজব তো! আমাকে পেত্নীর মত দেখতে লাগছে?” রোদ্দুরঃ-“আসল রূপ তো দেখাচ্ছেন না,                   আমার বউয়ের রূপ ধারণ করে আছেন” আমি ওর কথা শুনে মহা বিপদে পড়লাম।                                 হনুমানটাকে বুঝাতেই পারলাম না যে আমি তার বউ অবনি। আমি খাট থেকে নেমে                                 বললাম-“রোদ্দুর আমাকে ছুয়ে দেখো আমি অবনি” আমার কথা শুনে সে চিৎকার করে                           বললো-“এই না খবরদার না, আমার কাছে আসবেন না। আমি ভুত দেখে খুব ভয় পাই। আর                     বউ ছাড়া পৃথিবীর সব নারীকেও ভয় পাই😇” 
                 এবার আমার খুব রাগ হলো তাই জোর করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। 
                 ওমা হনুমানটা চুপ করে আছে। মনে মনে ভাবলাম ভয়ে জ্ঞান হারায়নি তো? 
                 ওকে ছেড়ে দিয়ে দেখি মিটমিট করে হাসছে। 


 আমিঃ-“এখন বলো আমি কে?” রোদ্দুরঃ-“আমার বউ” 


 আমিঃ-“কি করে বুঝলে?” রোদ্দুরঃ-“তোমার শরীরের ঘ্রাণ বললো তুমি আমার বউ” 


 আমিঃ-“এত দেরী করে বাসায় ফিরলে কেনো?” রোদ্দুরঃ-“কাজ ছিল” তারপর রোদ্দুর বাথরুমে গেলো                   ফ্রেশ হতে। হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠলো। দেখলাম আম্মু ফোন দিছে। আমি রিসিভ করে                       হ্যালো বলার আগেই আম্মু বললো-“শোনো বাবা তুমি তো জানোই আমার মেয়েটা একটু                           আহ্লাদী আর ছেলে মানুষ তাই ওফ্রেশ হতে। হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠলো। দেখলাম আম্মু                     ফোন দিছে। আমি রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই আম্মু বললো-“শোনো বাবা তুমি তো                         জানোই আমার মেয়েটা একটু আহ্লাদী আর ছেলে মানুষ তাই কে একটু মানিয়ে নিও। তুমি                       তো ওকে নিতে এসে একটুও দেরী করলে না, তাই কিছু বলতে পারিনী বলে ফোন করলাম।                       মেয়েটা সারা রাত এক মিনিটও ঘুমায়নি। ওকে খাইয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে বইলো। কি হলো                       বাবা তুমি কথা বলছো না কেনো?” 


                 আমি লাইনটা কেটে দিলাম। আম্মুকে বুঝতে দিলাম না যে আমি সব জেনে গেছি। হনুমানটা                   অফিস শেষ করে আমাকে নিতে গেছিল। আমি ওখান থেকে চলে এসেছি শুনে সে ওখানে                       দেরি করেনি। এ জন্যই হনুমানটার বাসায় ফিরতে এত দেরি হয়েছে। তাহলে মনে হয় সে                         আমাকে ভালবাসে। কিন্তু ভাব দেখায় যেনো আমাকে পাত্তাই দেয় না। এ জন্যই তো আমিও                     ওকে বুঝতে দিই না যে আমিও হাবু ডুবু হয়ে আছি। তাহলে এতক্ষণ সে আমার সাথে ভুতের                     নাটক করছিল? ভালোই তো অভিনয়ে এক্সপার্ট দেখছি! আমাকে এ ভাবে ভয় দেখালো! রাগে                   আমার হাত পা কাঁপা শুরু হলো। যতই ভাবি একটু ভালো হয়ে যাবো,এই হনুমানটা আমাকে                     কিছুতেই ভালো হতে দেয় না! সে বাথরুম থেকে বের হতেই বললাম-“তুমি গেস্ট রুমে                               ঘুমাবা”রোদ্দুরঃ-“সেকি কেনো?” 


 আমিঃ-“বউ ছাড়াই তো তোমার দিব্যি চলে তাই আমার কাছে শুইবা না” -“আমি গেস্ট নই এটা                               আমার বাড়ি তাই ইচ্ছে হলে তুমি ঐ রুমে যাও” ওর কথা শুনে খুব কাঁন্না আসলো একটি                           বারও বললো না যে,”অবনি তোমাকে ছাড়া আমার একটা মিনিটও চলবে না” আমি রাগ করে                   পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঐ হনুমানটাকে ছাড়া আমার ঘুম আসছে না😔।

                 আমার ভেতরের আমিটাই আমার সাথে শত্রুতা করছে। আমি যেনো আর আমিতেই                                 নেই,আমিটাও ঐ হনুমানের হয়ে গেছে। 
                 আর ঐ হনুমানটা আমাকে একটুও ভালোবাসে না😞 
                 এই সব ভাবতে ভাবতে কেঁদেই ফেললাম😭 
                 তারপর কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি। সকালে ঘুম ভেঙে দেখি রোদ্দুর আমার পাশে                       শুয়ে আছে। আমি অবাক হলাম কিন্তু কিচ্ছু বললাম না। বিছানা থেকে নেমে আসতেই সে                       আমার হাত টেনে ধরে আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার কানে কানে বললো-“বউ ছাড়া                     আমার দিব্যি চলবে কিন্তু এই তার ছেড়া পাগলী অবনিকে ছাড়া আমার এক সেকেন্ডও চলবে                    না 😍। 

                 আর এই কথাটা আমার পাগলীটা একদমই বুঝে না।” ওর কথা শুনে আমি স্ট্যাচু হয়ে গেলাম                   আর মনে মনে বললাম-“তাহলে হনুমানটা বোধ হয় আমাকে ভালোই বাসে😘! 
                 কিন্তু ওকে ছাড়াও যে আমার প্রতিটি সেকেন্ডই নষ্ট, সেটা আমি কিছুতেই ওকে বলবো না”

মন্তব্যসমূহ